ফেরেশতাদের শব্দ রেকর্ড করলো নাসা?

মহাকাশ নাকি সম্পূর্ণ নিঃশব্দ—এটাই এতদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল! কিন্তু নাসার গবেষণায় উঠে এসেছে এক বিস্ময়কর তথ্য! মহাশূন্য থেকে ভেসে আসা এক রহস্যময় ধ্বনি রেকর্ড করেছে নাসা, যা শুনে গবেষকরা অবাক! তাদের মতে, এটি যেন কোটি কোটি মানুষের একসঙ্গে কোনো মন্ত্র বা সংগীত গাওয়ার মতো শোনাচ্ছে! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই শব্দ কি সত্যিই শুধুই বৈজ্ঞানিক কম্পন, নাকি ফেরেশতাদের জিকিরের ধ্বনি? ১৪০০ বছর আগে মহানবী (সা.) বলেছিলেন, আকাশের প্রতিটি অংশে ফেরেশতারা সিজদায় লিপ্ত এবং আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত! তাহলে কি এবার সেই সত্যের প্রমাণ পেল বিজ্ঞান?

সাহীহ মুসলিম হাদিস আবু দার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মিরাজ থেকে ফিরে আসেন, তখন সাহাবারা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আকাশে কী দেখেছেন? কী শুনেছেন?” জবাবে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমি যা দেখেছি, তোমরা তা দেখতে পাও না। আমি যা শুনেছি, তোমরা তা শুনতে পাও না। আকাশজুড়ে প্রচণ্ড কম্পনের শব্দ শোনা যাচ্ছে, আর এর পেছনে রয়েছে এক গভীর রহস্য! আকাশের প্রতিটি অংশে, এমনকি চার আঙুল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই—সেখানে ফেরেশতারা সিজদায় লিপ্ত এবং তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহর জিকিরে মশগুল।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করেছেন যে, আকাশে প্রচণ্ড ঝাঁকুনির মতো শব্দ হচ্ছে। অতীতে ধারণা করা হতো যে, মহাকাশ একটি সম্পূর্ণ বায়ুশূন্য পরিবেশ, যেখানে শব্দের সৃষ্টি অসম্ভব। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নাসার একাধিক গবেষণা এই ধারণাকে বদলে দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মহাকাশে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা ও কম্পনের ফলে বিশেষ ধরনের শব্দ সৃষ্টি হয়, যা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

নাসার “আওয়ার ইউনিভার্স ইজ নট সাইলেন্ট” এবং “লিসেন টু দ্য ইউনিভার্স” শীর্ষক প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে মহাকাশে শব্দের সৃষ্টি হয়। সংস্থাটির অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ ও গবেষণা সরঞ্জামের মাধ্যমে এসব মহাকাশীয় শব্দ শনাক্ত ও রেকর্ড করা সম্ভব হয়েছে।

নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি এবং অন্যান্য দূরবীক্ষণ যন্ত্রের তোলা ছবিগুলোর তিনটি নতুন সোনিফিকেশন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি নতুন এক ডকুমেন্টারি NASA+ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে আত্মপ্রকাশ করে। সোনিফিকেশন হলো তথ্যকে শব্দে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া। চন্দ্র এবং অন্যান্য দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলো মহাকাশ থেকে যে বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করে, তা সাধারণত ডিজিটাল সংকেত আকারে থাকে এবং পরে চিত্র আকারে রূপান্তরিত করা হয়। সোনিফিকেশন প্রকল্প সেই তথ্যকে শব্দে রূপান্তর করে, যা নতুন এক অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে।

নাসার নতুন ডকুমেন্টারি “Listen to the Universe” NASA+ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে। এটি দেখায় কীভাবে সোনিফিকেশন তৈরি করা হয় এবং এই প্রকল্পের পিছনের গবেষণা দল কিভাবে কাজ করে। ২০২০ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প মূলত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য মহাকাশের তথ্য সহজলভ্য করার লক্ষ্যে শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিশ্বব্যাপী দর্শক-শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যায়। নাসার চন্দ্র প্রোগ্রামের ভিজুয়ালাইজেশন ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিজ্ঞানী কিম্বারলি আরক্যান্ড বলেছেন, আমরা NASA+ এবং SYSTEM Sounds-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে এই গল্পটি বলতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। দুর্দান্ত বিষয় হলো এই প্রকল্পটি দারুণভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং অনেক মানুষের মন ছুঁয়ে গেছে।

গবেষকদের মতে, মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন কণা বা নক্ষত্রের বিকিরণের ফলে কম্পন বা ভাইব্রেশন সৃষ্টি হয়, যা থেকেই এসব শব্দের উৎপত্তি ঘটে। মূলত, এসব শব্দ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ হিসেবে থাকে, যা পরবর্তী সময়ে শব্দতরঙ্গে রূপান্তরিত করা হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ১৪০০ বছর আগেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছিলেন যে, আকাশে কাঁপুনির মতো শব্দ হয়।

নাসা বর্তমানে বলছে, এই শব্দগুলি কাঁপুনির কারণে সৃষ্টি হয়। এমনকি গবেষণার সাথে যুক্ত একজন বিজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন, যে শব্দ শুনে তার মনে হয়েছে যেন একত্রে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ গ্রেগোরিয়ান চ্যান্ট গাইছে। গ্রেগোরিয়ান চ্যান্ট হলো খ্রিস্টানদের একধরনের ধর্মীয় সঙ্গীত, যা একসঙ্গে গাওয়া হয়। তবে, ১৪০০ বছর আগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আকাশে ফেরেশতারা একত্রে আল্লাহর জিকির করছেন।

নাসা মহাকাশে যে শব্দ আবিষ্কার করেছে, তার পেছনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে, যেমন নক্ষত্রের চুম্বক ক্ষেত্র বা প্রাচীন মহাবিশ্বের বিস্ফোরণ। তবে, এই শব্দের বর্ণনা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে তিনি ১৪০০ বছর আগে বলেছিলেন যে, আকাশে ফেরেশতারা একত্রে আল্লাহর জিকির করছেন। যদিও নাসা এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে, তবে এই শব্দগুলো প্রকৃতপক্ষে ফেরেশতাদের জিকিরের ধ্বনি কিনা, তা কেবল আল্লাহই জানেন। উৎস: ইত্তেফাক।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *