নতুন ভোটার যাচাই: দায়িত্ব পাচ্ছেন শিক্ষকেরা

ভোটার তালিকা হালনাগাদে গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অনেক এলাকা জনপ্রতিনিধিশূন্য হয়ে পড়ায় নতুন ভোটারের তথ্য যাচাই নিয়ে চিন্তায় ছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে সমস্যার সমাধান মিলছে শিক্ষকে। যেসব এলাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই, সেখানে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ এবং সরকারি কর্মচারীদের নিবন্ধন ফরম (ফরম-২)-এ যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর দেওয়ার সুযোগ দিতে চায় কমিশন। এ বিষয়ে শিগগিরই পরিপত্র জারি করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ইসি সূত্র জানায়, ভোটার তালিকা বিধিমালা অনুযায়ী নিবন্ধনের সময় নিবন্ধন ফরমে (ফরম-২) যাচাইকারীর স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। আর এতে স্বাক্ষর করেন জনপ্রতিনিধিরা। বর্তমানে বিশেষ পরিস্থিতিতে যেখানে জনপ্রতিনিধি নেই, সেখানে এ কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। তারপরও জনপ্রতিনিধি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অভাবে যাতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়, সে কারণে বিকল্প তৈরি করার চিন্তা করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসি চায় নিবন্ধনকেন্দ্রে ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মাদ্রাসার সুপার ও কলেজের অধ্যক্ষ যাচাইকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি অথবা তার আগে যাদের জন্ম এবং বিগত সময়ে হালনাগাদ কার্যক্রমে যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদেরকে ভোটার তালিকাভুক্তির জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এখন। তথ্য সংগ্রহের এ কার্যক্রম চলবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময় তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ এবং মৃত ভোটারকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার তথ্য সংগ্রহ করবেন। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনকেন্দ্রে বায়োমেট্রিকসহ নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদন গ্রহণ, মৃত ভোটারদের নাম কর্তনের তথ্যাদি এবং নতুন ভোটারের তথ্য বাংলাদেশ ভোটার রেজিস্ট্রেশন সফটওয়্যারের (বিভিআরএস) সাহায্যে ডেটা এন্ট্রি ও ডেটা আপলোড; ৫ মে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ খসড়া ভোটার তালিকার পিডিএফ প্রস্তুত ও সিএমএস পোর্টালে লিংক সরবরাহ করবে। এই হালনাগাদে সংগ্রহ করা নাগরিকদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা আগামী বছরের ২ মার্চ প্রকাশ করা হবে।

এর আগে ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের খসড়ায় নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন। এতে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ১০৩, মহিলা ভোটার ৬ কোটি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪১৫ এবং হিজড়া ভোটার ৯৯৪ জন। দাবি, আপত্তি, নিষ্পত্তি শেষে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য তিন বছর পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল সোমবার শুরু হওয়া এ কাজ চলবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ‘সঠিক তথ্যে ভোটার হবো, নির্বাচনে ভোট দেব’—স্লোগানে গতকাল সকালে ঢাকার সাভার উপজেলা পরিষদে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমাদের সিভিল সার্ভিসের লোকজন আন্দোলন করছেন জনপ্রশাসন দপ্তরে, তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে। তাঁরা বঞ্চিত, তাঁরা বঞ্চনার শিকার। ১৮ কোটি মানুষ যে বঞ্চিত হলো, তারা কোথায় যাবে? তাদের বঞ্চনার কথা কার কাছে বলবে? তাদের বঞ্চনার কথা কে দেখবে? ইলেকশন কমিশন! আমরা সম্মিলিতভাবে তাদের বঞ্চনাটা ঘোচাতে চাই। তারা যে এত দিন বঞ্চিত হয়েছে ভোটের অধিকার থেকে!’

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনাররা হালনাগাদের সময় জন্মনিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী নাম, বয়স ও ঠিকানা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা এবং দ্বৈত ভোটার বা দুবার ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। শতভাগ নির্ভুল হালনাগাদ ভোটার তালিকা করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তাঁরা।

২০০৭-০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন শুরু হয়। এরপর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-১০, ২০১২-১৩, ২০১৫-১৬, ২০১৭-১৮, ২০১৯-২০ ও ২০২২-২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করে ইসি।

তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি, জাতীয়তা বা নাগরিকত্ব সনদের কপি, নিকটাত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (মা-বাবা, ভাই-বোন প্রভৃতি), এসএসসি বা দাখিল বা সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) এবং ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ বা গ্যাস বা পানি, চৌকিদারি রসিদের ফটোকপি)।

নিজের নাম এবং মা-বাবার নাম জন্মনিবন্ধন বা শিক্ষাসনদের সঙ্গে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে; জন্মতারিখ অবশ্যই জন্মনিবন্ধন বা শিক্ষাসনদ অনুযায়ী হতে হবে; স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *