বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “গতকাল আমরা পাঠিয়েছিলাম, আজকে এটা পাস হয়েছে।” এটি দ্রুততম সময়ে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, “যখন জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়, তখন আমি গণমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছিলাম। দেশের একজন সিনিয়র নাগরিক হিসেবে তখনই আমি মনে করেছিলাম, কোনো মহৎ উদ্দেশে এটা নেওয়া হচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, “সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই-একজনের সঙ্গে আলাপের পর আমি বলেছিলাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে হবে। এজন্য যা যা করার আমি করব। সেজন্য ওই আইন বাতিল করতে চিঠি দিয়েছি।” সিইসি নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন ভবনে আয়োজিত রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) পিঠা উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে বিদ্যমান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিল করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর এ আইন বাতিল করে এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের কাছে রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে অনুরোধ করেছিল নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতার পালাবদলের পর নির্বাচন কমিশন আবার বিষয়টি সরকারের দপ্তরে পাঠানো পর আইনটি বাতিলে সম্মতি দেওয়া হল।
জানা গেছে, এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সালে একটি আইন করে। “জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন২০২৩” শীর্ষক সেই আইনের প্রজ্ঞাপন জারি করে সুরক্ষা সেবা বিভাগে না নেওয়া পর্যন্ত ইসির অধীনেই এই কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়। সেই অনুযায়ী এখনও এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আছে।
এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাঠানো নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা তৈরি, হালনাগাদ করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং নির্বাচন পরিচালনার কাজের ভার নির্বাচন কমিশনের। এ কাজ করার ফলাফল হিসেবে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিষয়টি আসে।
নির্বাচন কমিশন বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও একই ভোটার তালিকা ব্যবহার করা হয়। ২০২১ সালের ১৭ মে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন নেওয়ার বিষয়ে তৎকালীন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই বছরের ৭ জুন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব চিঠি পাঠিয়ে এই কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনে রাখার পক্ষে মতামত জানায়। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা না করে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ বাতিল করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়।