কবিতা

প্রথম কদম ফুল
শেখ আতাউর রহমান

গ্রাবিয়েল গার্সিয়া মার্কেস নোবেল লেকচারে দিয়েছিলেন অমূল্য যে ভাষণ
কিছু কিছু আজো মনে আছে তার: ‘যা কিছু ঘটে জীবনে সবটুকুই করে না ‘ম্যাটার’
যে ঘটনাটা মনে থাকে এবং কি ভাবে তা মনে থাকে সেটুকুই জীবন-বাকিটুকু অসার কথন!
জায়গা হয় তার আস্তাকুঁড়ের নোংরা আস্তরণ!’
এটাই বুঝি জীবনের প্রকৃত ধরন-স্মৃতিবিস্মৃতির খেলা চলে আমরণ আজীবন!
যেমন চায়ে এক কাপ চিনি দেয়া অথবা উবু হয়ে জুতোর ফিতে বাঁধা
ঘুমুতে যাওয়া রোজরাতে, ব্রেকফাস্ট সারা সুপ্রভাতে, সময়ে অসময়ে নখকাটা-কতো আর কোই
আছে দাড়ি কাটা গোছল করা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খোঁজা চিরুনীটা
সবশেষে খবরের কাগজে চোখটা বুলোই, ঘড়ির কাঁটা তখোন শব্দ করে বেজে চলেছে এক দুই
অতঃপর সন্তানেরে লেবুনচুসে ভুলোই!-১২টায় শুই
কথা কিন্তু হয়নিকো শেষ ওগো সখাসই, শীতে কমদামি কম্বলে নিজেকে মুড়োই
সবইতো একঘেয়ে- কোনোটিই নয় স্বতন্তর-সারাজীবনভর মহড়া দিয়ে চলি এমনই পৌনঃপুনিক অভ্যেসে
এবং ঝেড়ে ফেলে দিই মাথা থেকে সব-দিনে দিনে স্থূল হয় বিয়োগের খাতা অবশেষে!
তবু কথা থেকে যায় ভুলি কি জীবনের সবটাই?
কৈশোরে পাশের বাড়ির পাড়াবেড়ানি মেয়ে শিখা আমার হাতের তালোয় গুঁজে দিয়েছিলো
ক’একটি ফুলের বিচি, বলেছিলো লাগিয়ে দিবি উঠোনে, ফুটবে ফুল দোপাটি
আমি হেলাফেলা করে সে-বিচিগুলো পুতে দিই উঠোনে-তারপর যথারীতি ভুলে যাই এ ঘটনা থাকে না মনে
অতঃপর একদিন সকালে ঘুম ভেঙে বিস্ময়ে দেখি অযত্নে পুতে দেয়া সেই বিচিতে
থোকা থোকা ফুটেছে ফুল দোপাটি! ইচ্ছে করে তখুনি এ ফুলে সাজাই পাগলি মেয়ে শিখার
অগোছালো ঋদ্ধ খোঁপাটি!
এ বড় অতি তুচ্ছ ঘটনা-দোপাটিও অতিসাধারণ ফুল-কিন্তু আমার জীবনে তা ‘প্রথম কদম ফুল!’
সে আনন্দস্মৃতি আজও ছিনিয়ে নিতে পারেনিতো যম!
জীবন এ-ভাবেই বয়ে চলে নদীর মতোন-থামেনাকো একদম!!

Pause

Mute
Remaining Time -10:28

Close PlayerUnibots.com

বিবর্তনের সূত্র ধরে
নাসির আহমেদ

বিবর্তনের পথে প্রান্তরে শুধু ঝরাপাতা,
মরাডাল আর খড়কুটো ধুলোবালি
খোয়া ওঠা লাল পথের কাঁকর;
ব্যর্থতা দেয় আনন্দে হাততালি!

এইভাবে যাও সভ্যতা তুমি ডারউইন থেকে
জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, কোরআনে, পুরাণে বিশ্বাসে আর
অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলে দুলে।
আদম-ঈভের প্রজনন-গাথা বহমান স্রোত টানে।

সৃষ্টির এই শূন্যতা আর মহাশূন্যতময়
নক্ষত্রের ধুলিঝড়ে ওই সৌরজগৎ
আমার মতই অন্য ভাষায় হৃদয়ের কথা কয়?
জানার সুযোগ নেই বলে বোবা-নির্বোধ আমি।

কোটি কোটি প্রাণ আসা আর যাওয়া বৃথা কলতানে
এত স্বজনের শোক বিস্মৃত ! বেচে থাকা এর মানে?

 

আমিও দাঁড়িয়ে যাই
অনিকেত সুর

টিসিবির ট্রাকের পেছনে সারিগুলি দীর্ঘ হতে থাকে-

নিত্যপণ্যদাম লাফিয়ে আকাশ ছুঁলে
গোলাপবাগের মাঠে একদিন
শিশুদের হল্লা থেমে যায়
উৎসুক চোখে ওরা রাস্তার দৃশ্য দেখে

অপেক্ষমাণ ভিড়ে আচানক হুড়াহুড়ি, চিৎকার
ছুট পড়িমরি
নারী-পুরুষের দুটি সারি পশ্চিমে লম্বা হতে হতে
ক্রমশ দীর্ঘ আরও, দীর্ঘতর

বরাদ্দ বস্তাগুলি খালি করে ফিরে যাচ্ছে টিসিবির ট্রাক
সারির অর্ধেক লোক-
বিহ্বল, হাতে ভাঁজ-করা শূন্য বাজারের থলে-
তখনো দাঁড়িয়ে থাকে

অতঃপর ফের একদিন এলে দীনবন্ধু যান-

হুড়াহুড়ি, চিৎকার
সারিগুলি দীর্ঘ হতে হতে ইউ-টার্ন নেয়
এবং ভাঁজ-করা শূন্য বাজারের থলে হাতে
লাইনের শেষে

এবার আমিও দাঁড়িয়ে যাই- আমার পেছনে
সারি আরও দীর্ঘ হতে থাকে।

 

জয় বাংলা ১৯৭১
মারুফ রায়হান

একাত্তরে ‘জয় বাংলা’ শুনে কার বুক জুড়ে ভূমিকম্প হতো?
হিংস্র হায়েনা, খুনী খানসেনা, কুলাঙ্গার রাজাকার, শূকর শকুন ছাড়া আর কার।

আর, ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণে কার সংকল্প বজ্রকঠোর হতো?
বাংলা মায়ের মায়াকাড়া আঁচলের, ঘাসের-কাশের সহস্র সবুজের, ফিঙ্গে-টিয়া দোয়েল দলের, তরঙ্গ-তোলপাড় পদ্মা-যমুনার; নতুন দিনের সুকান্ত-নজরুলের, বিমর্ষ জোছনা উ™£ান্ত তারার; সাড়ে সাত কোটি মুক্তিযোদ্ধার।

 

সেই সুর ফিরে আসে
বাবুল আনোয়ার

পরিচিত বৃত্তের বাইরে সবটাই
গচ্ছিত ছিল নিবিড় আঁধারে
জোছনা ও জলের অক্ষরে
দূরবর্তী মেঘ নিকটতম লোকালয়
কোথাও কোনো দিন ধ্বনিত হয়নি তা
সে সুর ফিরে আসে নির্জন রাতে
নুলো ভিখেরির গানে বিজয় গৌরবে।

 

একদিন সারা দিন
শাহীন রেজা

একদিন সারাদিন সাহসের সাথে থেকো
একদিন সারাদিন ‘মুক্তি’কে বুকে রেখো

একদিন সারাদিন সরোদের তান শোনো
একদিন সারাদিন হৃদয়ের তারা গোনো

একদিন সারাদিন রক্তের নদী আঁকো
একদিন সারাদিন শোকের কফিনে ঢাকো

একদিন সারাদিন অমলিন যুদ্ধ-খেলা
একদিন সারাদিন স্মৃতিতে ভাসুক ভেলা

একদিন সারাদিন আমরাও হই মুক্তি
একদিন সারাদিন শুধু লালসবুজের চুক্তি

একদিন সারাদিন আকাশে রঙের ধারা
একদিন সারাদিন ফাগুন আত্মহারা

একদিন সারাদিন ‘আমি বাংলার লোক’
একদিন সারাদিন লক্ষ দিনের হোক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *