ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ‘ওড়না পরা’ নিয়ে হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হলে বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়েছিল মোস্তফা আসিফ অর্ণব নামের এক ব্যক্তিকে। পরদিন বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তিকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি জামিনে মুক্তি পান। গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সহকারী বাইন্ডার হিসেবে কাজ করেন।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে সমর্থন করা একদল ব্যক্তি তাকে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন হাতে দিয়ে এবং মাথায় পাগড়ি ও গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করেছেন। তবে মি. অর্ণব গণমাধ্যমে বলেছেন, যারা তাকে সমর্থন করে ওইগুলো দিয়ে বরণ করেছেন, তাদেরকে তিনি আগে থেকে চিনতেন না। যারা মি. অর্ণবকে ছাড়িয়ে এনেছেন, তারা মি. অর্ণবের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মি. অর্ণবের বিরুদ্ধে করা ওই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মামলা প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে ‘তৌহিদি জনতার’ চাপের কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ‘বাদী ও বিবাদীর মধ্যে সমঝোতা হয়েছে’ এবং অভিযোগকারী মেয়েটির ‘নিরাপত্তার’ কথা তাদের ভাবতে হচ্ছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর জানিয়েছেন, তারা মামলা প্রত্যাহারের একটি আবেদন পেয়েছেন। তবে প্রত্যাহারের আগে আরও আইনি প্রক্রিয়া আছে।
এর আগে, পুলিশ মি. অর্ণবের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে তাকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে এবং তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বুধবার সন্ধ্যা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত শাহবাগ থানায় ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে একদল লোক অবস্থান করেন। শাহবাগ থানার কর্তব্যরত পুলিশ প্রশান্ত কুমার আজ বেলা ১২টার দিকে জানিয়েছেন, তারা (তৌহিদী জনতা) রাত থেকে প্রায় সকাল ৯টা পর্যন্ত থানায় ছিলেন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা, নারীদের হয়রানির নানা খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় আইনি পদক্ষেপের ঘাটতি উদ্বেগের পরিবেশ তৈরি করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থী গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে মোস্তফা আসিফ অর্ণবের একটি ছবি সংযুক্ত করে তিনি বিবরণীতে লিখেন, ওই ব্যক্তি তাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে ‘হয়রানি’ করেছে। তার ভাষ্য, “সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলতেছে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল।” “পরবর্তীতে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি আপনি কোন হলে থাকেন কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন। সে বলে সে এই ক্যাম্পাসের কেউ না,” ফেসবুক পোস্টে লিখেন ওই শিক্ষার্থী।
তিনিআরও লিখেন, “আমি সালওয়ার কামিজ পরে ঠিক মত ওড়না পরে ছিলাম। সে আমাকে বলে আমার নাকি ওড়না সরে গেছে। পরে আমি তাকে বললাম এইটা তো আপনার দেখার বিষয় না, আর আপনার তাকানোও জাস্টিফাইড না। এরপর আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে সে দৌঁড় দিয়ে চলে যায়।”
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ হলো— যেহেতু ওই শিক্ষার্থী ওই ব্যক্তির ছবিও পোস্ট করেছিলেন, সেই ছবি ধরেই তাকে শনাক্ত করা হয়। তখন জানা যায়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই কর্মরত। এই ঘটনার জের ধরে কিছু শিক্ষার্থী তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কক্ষে নিয়ে যান। প্রক্টরের কক্ষে থাকা অবস্থার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের মুখে মি. অর্ণবকে বলতে শোনা যায়, তিনি ওই নারীর ওড়না বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রক্টরও তখন বলছিলেন, “ওর লাইব্রেরিয়ানকে আমি কল করছি, ওকে সাসপেন্ড করবে।”
তিনি অভিযুক্তকে জিজ্ঞেস করছিলেন, “বাড়ি কই?” উত্তর আসে, “মানিকগঞ্জ।” তার পাল্টা উত্তরে প্রক্টর মি. অর্ণবকে উদ্দেশ করে বলেন, “মানিকগঞ্জ চলে যাইও।” এসময় একজন শিক্ষার্থী মি. অর্ণবের কাছে জানতে চান, তিনি “গা ঢাকছে, বুক তো ঢাকে নাই” বলে মন্তব্য করেছে কি না। উত্তরে মি. অর্ণব হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। শিক্ষার্থীরা তখন প্রক্টরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, অভিযুক্তকে তারা শাহবাগ থানায় দিয়ে আসবেন কিনা। প্রক্টর তখন বলেছিলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই। ওর চাকরি চলে যাবে, দাঁড়াও।”
এসময় অভিযুক্তকে প্রক্টরের কাছে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়। তখন প্রক্টরকে রেগে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, “মাফ কিসের?” শিক্ষার্থীরাও ক্ষুব্ধ হয়ে যান তখন। এর ঠিক পরপর মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে ওই নারী শিক্ষার্থীর পা ধরে মাফ চাইতেও দেখা যায়। এরপর প্রক্টর মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানববন্দি দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় অভিযুক্তকে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং মামলাও করা হয়। বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন ওই নারী শিক্ষার্থীই। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় মি. অর্ণবকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানার পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পাঁচই মার্চ দুপুরর দেড়টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি ও তার এক বন্ধু। রাজু ভাস্কর্যের সামনে পৌঁছালে ওই নারীকে মি. অর্ণব প্রশ্ন করেন, তিনি কেন পর্দা করেন নাই এবং তার ওড়না কেন ঠিক নাই? এজাহারে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি একই আচরণ করেছে। তবে অভিযুক্ত মি. অর্ণব অন্য নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি একই আচরণের কথা অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, গ্রেফতারের ঘটনা জানাজানি হলে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে একদল লোক থানায় ঢুকে পড়ে। তারপর তারা পুলিশের কাছ থেকে এজাহারের ছবি নিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। তাতে ওই নারীর নাম, ঠিকানা, পরিচয়– সব ছিল। থানার যেসব ভিডিও ফেসবুকে এসেছে, সেগুলোর একটিতে ‘তৌহিদি জনতা’ দাবি করা ব্যক্তিদের রাগান্বিত স্বরে বলতে শোনা গেছে—মেয়েটির বিরুদ্ধে চুরির মামলা দিতে হবে। এক পর্যায়ে তারা থানার হাজতে ঢুকে অভিযুক্তের একটি সাক্ষাৎকারও সম্প্রচার করে।
সেই সাক্ষাৎকারে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তিনি ওই নারীর পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি কখনও উচ্চস্বরে কথা বলি নাই, গালি দিয়ে কথা বলি নাই, তাকে টাচ করে কথা বলি নাই, তাকে গালি দিয়ে কথা বলি নাই… সে আমায় বলছে, আমি নাকি ইভটিজিং করছি।”
‘তৌহিদী জনতার’ পরিচয়ে ওই ব্যক্তিরা শাহবাগ থানায় ঢুকে কীভাবে অভিযোগকারীর পরিচয় নিলো এবং কেন তাদের ঘটনাস্থল থেকে সরানো গেল না, তা জানতে শাহবাগ থানা ও রমনা জোনের একাধিক কর্মকর্তাকে অনেকবার কল করা হলেও বৃহস্পতিবার সারাদিন তারা কেউ কল রিসিভ করেননি। মি. অর্ণবের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ আজ দুপুরে বলেন, “ওই মেয়ে গতকাল আমার কাছে যে আবেদন করেছিলো, তা লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিককে পাঠিয়েছি।”
“গ্রন্থাগারিক হয়তো তার ব্যাপারে একটি কমিটি-টমিটি করে…যেটা আমাদের আনুষ্ঠানিক প্রসিডিওর (প্রক্রিয়া)…একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং করে খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন।” তিনি আরও জানান, মি. অর্ণবের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। “ওই মেয়ে মামলা করেছিলো। তা নিয়ে একটি আনরেস্ট (অস্থিরতা) হয়েছে,” বলেন প্রক্টর। মামলার বাদীর সাথে গতকাল সারারাত যোগাযোগ হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আজকে মামলাটা প্রত্যাহার করবে, আমার সহকারী প্রক্টর ও মোবাইল টিম ওকে সাথে করে নিয়ে গেছে কোর্টে। আমরা তাকে প্রোটেকশন দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ চাইলে তিনি বলেন, “একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং (সমঝোতা) হয়েছে। তৌহিদী জনতা কালকে সারারাত শাহবাগ ঘিরে রেখেছিলো। ওই কারণেই হয়েছে… একটা নেগোসিয়েশন হয়েছে… তৌহিদি জনতা তো ঘিরে-টিরে রেখেছিলো।”
“ওরা (তৌহিদি জনতা) বলছিলো থানা থেকেই মামলা প্রত্যাহার করতে। কিন্তু থানা ও অন্যান্য পক্ষ রাজি হয়নি। বলেছে, কোর্টে যাবে। কোর্টে জামিন পেলে কোর্ট থেকেই বা কীভাবে মামলা প্রত্যাহার করা যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে,” বলেন মি. আহমেদ।
“থানাকে ঘিরে তৈরি হওয়া অস্থিরতা নিরসন করার জন্য বাদী ও বিবাদীর মধ্যে, থানা ও আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের মধ্যস্ততায় এরকম একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে” জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মামলা প্রত্যাহারের শর্ত হিসেবে ওই ব্যক্তিকে মুচলেকা দিতে হবে যে মামলার বাদীর নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়লে তিনি দায়ী থাকবেন। “কারণ মেয়েটার নিরাপত্তা আমাদের দেখতে হবে,” বলেন প্রক্টর।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য সামিনা লুৎফা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে বলেন, “এই মামলা তুলে নেওয়া হলে সারা দেশব্যাপী নারী নির্যাতকদেরকে খুবই অশুভ বার্তা দেবে।”
“এতে করে নির্যাতনের পরিমাণ বাড়বে। নারী আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে যাবে। সুতরাং, এটিকে কোনোভাবেই ওয়েলকাম করার কোনো সুযোগ নাই,” তিনি যোগ করেন। জামিনযোগ্য অপরাধে যে কেউ জামিন পেতেই পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “মামলা প্রত্যাহার করা খুবই নেতিবাচক হবে, অনুচিত কাজ হবে।” তবে তিনি মনে করেন, এই ঘটনায় যা করা উচিত ছিল, তা যথাযথভাবে করা হয়নি। সামিনা লুৎফা বলেন, “যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ… বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নীপিড়ন সেল আছে… সেখানে অভিযোগ যাওয়া উচিত ছিল। সাময়িক বহিষ্কার বা অব্যাহতি ঠিক আছে। এটি সমাধানের উপায় তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আছে।”
“সেটি করা হলে সারা রাতভর একটি মব, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে থানার ভেতর ঢুকে সেখানে আটক রাখা একজন মানুষের ভিডিও করছেন, যিনি ভিক্টিম তার যাবতীয় তথ্য বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন ও তাকে ভয়াবহভাবে হ্যারাজ (হয়রানি) করছেন; এগুলোকে আমরা এভয়েড করতে পারতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটু জোরালো ভূমিকা নেয়া উচিত ছিল” বলে মন্তব্য করেন সামিনা লুৎফা।
তবে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি তথ্য ছড়িয়েছে এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার ঘটনায় মামলা প্রত্যাহার করতে ওই নারী শিক্ষার্থীকেই অনুরোধ বা চাপ প্রয়োগ করেছে। ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি ভুল, অসত্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে ছড়ানো হচ্ছে।”
এতে আরও বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডি গতকাল থেকে শিক্ষার্থীর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে হেনস্তাকারীকে তাৎক্ষণিক থানায় প্রেরণ করেছে এবং মামলা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছে।” এছাড়াও ঘটনাটির বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করার জন্য ইতোমধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, বলা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ঘটনা না, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে এমন আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এর আগে ঢাকার লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে ধূমপান করা নিয়ে দুই তরুণীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তারও আগে গত কয়েক মাসে নারীকেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্রমাগত একই প্যাটার্নের ঘটনায় সরকারের সমর্থন রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা মনে করেন, নারীদের সাথে যা হচ্ছে, তা একপ্রকার মোরাল পুলিশিং এবং “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এতে সম্মতি দিয়ে যাচ্ছেন”।
“এমন সব ঘটনা ঘটছে, তাতে সরকারের নীরবতা প্রমাণ করছে তারা পপুলিস্ট একটা অ্যাপ্রোচ নিচ্ছে” জানিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ঘটনা প্রসঙ্গে রেজওয়ানা করিম বলেন, “যারা তাকে ছাড়িয়ে আনতে গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাদেরকে ওখান থেকে সরানোর কথা ছিল।”
“তা তো করা হয়নি। বরং যিনি মামলা করেছেন তার ডিটেল তারা থানা থেকে নিয়ে যায়। একটা রাষ্ট্র কতখানি পিছিয়ে পড়া হলে তার এই নৈতিকতার শিক্ষাটা নাই যে ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য সংশ্লিষ্ট পক্ষ ছাড়া অন্য কারও পাওয়ার এখতিয়ার নাই,” যোগ করেন তিনি।
রেজওয়ানা করিমের মতে, “একজন নারীকে অপর একজন মানুষ এসে পোশাক ঠিক করতে বলতে পারে না। কোনো সভ্য রাষ্ট্রে এই ধরনের অসভ্য চর্চাকে প্রমোশন দেওয়া হয় না।” তিনি বলেন, “সরকারের দায়িত্ব জনগণের, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তা না করে মব সৃষ্টিকারীদের সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করা ও তাদের বাধা না দেওয়া, তাদের পক্ষে-বিপক্ষে বা এই সম্পর্কিত কোনো স্টেটমেন্ট না দেওয়া ইন্ডিকেট করে যে তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে যাতে কথাও না বলতে পারি, চুপ থেকে তাতে সম্মতি দিচ্ছে। এটি হতাশজনক।”
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীনেরও মত প্রায় একই। তিনিও বলেন, “মোরাল পুলিশিং-এর কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি।” সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতা রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত হয় বলেই পুরুষের ক্ষমতা জারি থাকে এবং অনুকূল পরিবেশে তা আরও বেড়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তৌহিদি জনতা বা ইসলামিক জনতা নিয়ে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি।”