বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং অন্যান্য ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হাত ছিল না বলে দাবি করেছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। তাঁর বিশ্বাস, ভারতীয় কর্মকর্তারাও এই ধরনের মনোভাবই পোষণ করেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুলিভান যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এভাবে তুলে ধরেন। শুক্রবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। সুলিভান সম্প্রতি নয়াদিল্লি সফর শেষ করে ওয়াশিংটনে ফিরেছেন। হিন্দুস্তান টাইমস তাঁর কাছে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টা, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতির অভিযোগ, বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তনের পেছনে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে ভারতের ধারণার বিষয়ে জানতে চেয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস এটাও জানতে চেয়েছে মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি—এই প্রেক্ষাপটে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে সুলিভানের মন্তব্য কী। পাশাপাশি, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেটের নেতৃত্বদানকারী’ হিসেবে বলা হয়, এমন অবস্থান থেকে তিনি কিভাবে এসব প্রশ্নের জবাব দেবেন? উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি সমান্তরাল রাষ্ট্র, সমসাময়িক রাজনীতি বিজ্ঞানে একে ‘ডিপ স্টেট’ বলা হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রে পর্দার অন্তরালে একগুচ্ছ রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সক্রিয় থাকে।
সুলিভান বলেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করতে চাই, আমি ডিপ স্টেটের নেতৃত্বে আছি এবং সেই সঙ্গে এই ধারণাও প্রত্যাখ্যান করব, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর পেছনে আমেরিকার হাত ছিল। বিষয়টি একেবারেই অবাস্তব। জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমি মনে করি না, তাঁরাও এটা বিশ্বাস করেন।
ভারতে বিদায়ি মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গার্সেটি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন এবং আগত ট্রাম্প প্রশাসন উভয়ই বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গতিশীল পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার গুরুত্ব ব্যক্ত করেছে।’ তিনি শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা দেখা করেছিলেন এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গ সেই কথোপকথনের একটি প্রধান বিষয় ছিল। আমরা কিভাবে বাংলাদেশকে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য করতে পারি? কিভাবে বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন হতে পারে এবং বাংলাদেশের সবাইকে রক্ষা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। আমরা সবাই একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ, সহনশীল বাংলাদেশ দেখতে চাই। এ বিষয়ে ভারত, আমেরিকা উভয়েরই স্বার্থ জড়িত।
সুতরাং, আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে এ বিষয়ে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে।’ যেকোনো রাজনৈতিক পালাবদলই কঠিন এবং তা সব সময় ভালো হবেই—এমনটা বলা যায় না বলে গার্সেটি মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, বিষয়টি ইতিবাচক হতে পারে যদি বিশ্বের অন্যান্য সম্প্রদায় তা মেনে নেয় এবং দেখে যে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি মিল রয়েছে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া