তওবার সঠিক নিয়ম ও দোয়া

ইসলাম গুনাহমুক্ত জীবনযাপনে উৎসাহ দেয়। সৎকাজের আদেশের পাশাপাশি অসৎকাজ থেকে দূরে থাকতে আল্লাহ আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে বাস্তবতা হলো পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত জীবনযাপন আমাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ জন্য কোনো মানুষ যখন গুনাহ করে, অনুশোচনায় ভোগে, এ জন্য গুনাহ মুক্তির জন্য আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন। তওবা করার মধ্য দিয়ে আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া কালবেলা অনলাইনের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

তওবার দোয়া

أَسْتَغْفِرُ اللهَ العَظِيْمَ الَّذِىْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্ল-হাল আ’জিমাল্লাজি লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোনো যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আর তার কাছ তওবা করছি।

তওবার সঠিক নিয়ম ও দোয়া

তিরমিজি শরিফের একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামিও হয়।’ আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজেও উপরোক্ত দোয়া পড়তেন। একই দোয়া নবী তার সব উম্মতকে শিখিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের সুরা আন নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।

এ ছাড়া সুরা আত-তাহরিমের ৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, খাঁটি তওবা। মুসলিম শরিফের (৭০৩৪) এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ইয়া আইয়্যুহান নাসু তুবু ইলাল্লাহি। অর্থ : হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর কাছ তওবা করো। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ফিরে এসো, প্রত্যাবর্তন করো। সব সময় তওবা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব বলে মত বিশেষজ্ঞ আলেমদের। তওবা জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও ভালোবাসা লাভের বড় সুযোগ। এ প্রসঙ্গে সুরা বাকারার ২২২ নম্বর আয়াতে রাব্বুল আলামিন বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি বেশি তওবাকারীকে ভালোবাসেন।

তওবার নিয়ম
তওবা কবুলের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যেগুলো মেনে তওবা করলে আল্লাহ তার বান্দার তওবা কবুল করবেন। প্রথমত : দ্রুত পাপ কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত : অতীতের সব পাপ কাজ ও ভুলত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। তৃতীয়ত : অন্তরে বিগত পাপ কাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেখানে ফিরে না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। চতুর্থত : লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহর জন্য ইস্তিগফার (মাফ চাইতে হবে) করতে হবে এবং তওবা করতে হবে।

পঞ্চমত : কারও হক নষ্ট করে থাকলে যথাযথ ব্যক্তিকে তার অধিকার সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে দিতে হবে। অথবা যেভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে কিংবা ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ নিতে হবে। ষষ্ঠ : অন্তরে রাখতে হবে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ ক্ষমাশীল। অতএব, তিনি আমার তওবা কবুল করবেন। সপ্তম : তওবার পর পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। অষ্টম : পাপ থেকে তওবার পর কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আবারও তওবা করে ফিরে আসতে হবে। যখনই কোনো পাপ কাজ সংঘটিত হবে, সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে ফিরে আসতে হবে এবং তা মৃত্যু পর্যন্ত।

নবম : তওবা কবুল হয়েছে কিনা তা বোঝার উপায়? এ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলারসরা বলছেন, কারও যদি তওবার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয়, অর্থাৎ পাপের কাজ অনেক কমে যায় এবং ভালো কাজ বৃদ্ধি পায়, তাহলে আশা করা যেতে পারে তার তওবা কবুল হয়েছে। কিন্তু কারও যদি এমন না হয়, অর্থাৎ তওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তার তওবায় ত্রুটি আছে। তার উচিত হতাশ না হয়ে বারবার আন্তরিকতার সঙ্গে খালেস নিয়তে তওবা করা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *